দুখু বাঙাল (Dukhu Bangal)
দুখু বাঙাল সত্তর দশকের একজন বাংলাদেশি কবি। জন্ম ৩০ জুন ১৯৫৭ অবিভক্ত বরিশাল জেলার বাউফল থানাধীন ছোট ডালিমা গ্রামে; যা বর্তমান পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত। পিতৃপ্রদত্ত নাম মুহাম্মদ ইছহাক। মা আছিয়া খাতুন, বাবা আবদুর রশিদ হাওলাদার। দাদির আদুরে নাম দুখু।
ছেলেবেলা ও শিক্ষাজীবন
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া গ্রামের স্কুলÑ নাজিরপুর-ছোট ডালিমা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে; যা পূর্বে ছিল একটি মকতবখানা। এইটে পড়াকালীন আশপাশের লোকদের ধর্মীয় ও সামাজিক বিরোধিতার মুখে কতিপয় সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে একরাতের মধ্যেই স্কুলমাঠে গড়ে ওঠে শহিদ মিনার। ছেলেবেলার এই সাহসী ঘটনার জের ধরে ঘটে তাঁর স্কুলবদল। ভর্তি হন থানা সদরের বাউফল হাইস্কুলে। এখান থেকেই ১৯৭২ এ (দ্বিতীয় ব্যাচ) তাঁর এসএসসি পরীক্ষায় পাস। ১৯৭৪ এ বাউফল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বাউফল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রিলাভ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কলমসৈনিক ও কিশোরযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও রাজনীতি
১৯৭১ সালের মার্চে ছাত্রনেতা আবুল কালাম খান ও থানা পুলিশের সহায়তায় বাউফল পাবলিক ফিল্ডে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। একাত্তরের মে মাসে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনদিন পর মুক্ত। ১৯৭৪-এর এপ্রিলে সরকারের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তিনি সেনাবাহিনীর হাতে বাউফলে গ্রেফতার হয়ে পাঁচদিন পর মুক্ত হন জেলা সদর পটুয়াখালীস্থ সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প সার্কিট হাউস থেকে। একাত্তরে যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একবার এবং স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর হাতে আরেকবার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শোকাবহ ঘটনার পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের চার বন্ধুÑ রবিন দাশ, ইব্রাহিম সেলিম, যদুনাথ পাল ও দুখু বাঙাল বাউফলে একরাতে দেয়াল লিখন লিখতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। স্কুলজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত; ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা।
পারিবারিক জীবন
কুষ্টিয়ার মেয়ে ফাতেমা জোহরার সঙ্গে ১৯৮২ সনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। অবসরজীবনে খুলনা নগরীর বাসিন্দা। তাঁদের রয়েছে দুই পুত্র ও এক কন্যা; পুত্র ও কন্যাদের নামÑ আশিক, মানিক ও রোজা।
চাকরি ও সাহিত্যচর্চা
১৯৮১ সনে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মজীবন শুরু। ১৯৮৭ সালে পদোন্নতি। ২০০৮-এর জুনে মাগুরা জেলায় কর্মরত থাকাকালীন বিভাগীয় এক বৈঠকে ক্রসফায়ার ও কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বক্তব্য রাখার জের ধরে চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ। কর্মজীবনে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন সুনামের সঙ্গে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ লালদিঘির ময়দানে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা একটি শামিয়ানা টাঙানো ট্রাকে ৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দসহ জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়ে রাইফেলের গুলির নিশানা হয়ে পড়লে পরিদর্শক কাজী শাহবুদ্দিন আহম্মদের সহায়তায় সরকারি দায়িত্বপালনকালে দুখু বাঙালের (পরিদর্শক মুহম্মদ ইছহাক দুখু, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চান্দগাঁও থানা, সিএমপিÑ চট্টগ্রাম) তাৎক্ষণিক জানবাজি সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন নেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। চট্টগ্রাম গণহত্যা নামে পরিচিত এই ঘটনায় মহিউদ্দিন শামীমসহ ২৪ জন শহিদ হন। বিচারে (বিস্তারিত কোর্টরেকর্ড, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ) তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট জনের ফাঁসির আদেশ হয়। বর্তমান পেশা লেখালেখি। লেখক নামেই অধিক পরিচিত। কলেজজীবনে বাউফলের কাছারি বাড়ির নাটমন্দিরে ম স্থ হয় তাঁর ‘আজব সংলাপ’ একাঙ্কিকা এবং ‘বিমূঢ় জিজ্ঞাসা’ নাটক। ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন পত্রিকার ছোটদের আসর ও শিশুতোষ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। সত্তর দশকের এই কবি কবিতায় ভিন্ন স্বাদ ও মাত্রার দাবিদার।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠন ‘একাল’ জীবননগর কর্তৃক সংবর্ধনা (১৯৯৫)
মোরেলগঞ্জ নাগরিক কমিটি কর্তৃক গণসংবর্ধনা (১৯৯৭)
জীবননগর সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মাননা পুরস্কার (২০১১)
জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরা কর্তৃক জীবনানন্দ সম্মাননা স্মারক (২০১২)
স্বাধীনতা সংসদ ঢাকা কর্তৃক কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক (২০১২)
কবিতালাপ পুরস্কার ২০১১ (২০১২)
মাইকেল মধুসূদন শুভেচ্ছা সম্মাননা (২০১৩)
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী ১৪২২ উপলক্ষে রূপসা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্মাননা স্মারক (২০১৫)
কবিতা পরিষদ সাতক্ষীরা কর্তৃক কবিসম্মাননা (২০১৭)
কাজী ইমদাদুল হক সম্মাননা (২০২০)
বাঙালি সাহিত্য সম্মাননা (২০২৩)সহ অনেক।
প্রকাশিত রচনাবলি
কবিতা
নির্বাচিত নির্বাসন (১৯৮৬)
নির্জন পাথর (১৯৯৪)
কাছে আসি দূরে যাই (২০০১)
সমুদ্র সান্নিধ্যে মন (২০১১)
যে পাতে জনমলোহু (২০১৫)
সোনার কবজ (২০১৮)
হরিজন শব্দাবলি (২০১৮)
নির্বাচিত কবিতা (২০১৯)
শ্রেষ্ঠ কবিতা (মুজিববর্ষ-২০২০)
ছড়া
পায়রা নদীর পট (২০১৫)
একাত্তর ও সপ্তম নৌবহর (২০১৬)
ছড়া সংগ্রহ (২০২১)
গদ্য
আবুলকান্দাঢেউ (আত্মজৈবনিক গ্রন্থ, ২০২৩)
সম্পাদিত গ্রন্থ
দীর্ঘ কবিতায় পিতা তুমি (মুজিববর্ষ-২০২০)